ফিলিস্তিনে নৃশংস আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে বর্বর ইসরাইলের সব ধরনের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে সাধারণ মুসলিম সমাজ। এর ফলে ইসরাইলি পণ্য বয়কটের আন্দোলন এবার গতিশীল হয়েছে। আর পশ্চিমা ব্র্যান্ডের জায়গায় স্থান পেয়েছে স্থানীয় পণ্যগুলো। এ কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে পশ্চিমা ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো। এই বয়কট আন্দোলন নতুন নয়। তবে ইসরায়েলের সকল পণ্য সহজেই চিনতে পারার হাতিয়ার বিশেষ এক বারকোড নাম্বার বদলে দিয়েছে আন্দোলনের গতিপথ।
বারকোড হল একটি বর্গাকার বা আয়তক্ষেত্রকার চিত্র যাতে সমান্তরাল কালো রেখা এবং বিভিন্ন প্রস্থের সাদা স্থানের একটি সিরিজ থাকে, যা স্ক্যান করে পাঠ করা যায়। দ্রুত সনাক্তকরণের উপায় হিসেবে পণ্যগুলিতে বারকোড ব্যবহার করা হয়৷ সহজভাবে বললে কোনো পণ্য কেনার পর প্যাকেটের গায়ে আমরা কিছু সাদা-কালো দাগ কাটা আর তার নিচে কিছু সংখ্যা লেখা দেখতে পাই। এই লেবেলকেই বলে বারকোড। প্রতিটি ব্যান্ডের পণ্যের জন্য আলাদা বারকোড নাম্বার ব্যবহৃত হয়।
মূলত বারকোড তথ্য উপস্থাপন করার একটি উপায় বা মাধ্যম। আবার অন্য ভাবে বলতে গেলে বারকোড মূলত পণ্যের প্রস্তুতকারক কোম্পানি, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, ওজন, পরিমাণ, মূল্য এবং স্টক সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপনের একটি ডিজিটাল মাধ্যম। অর্থাৎ কোনো পণ্যের গায়ে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের সাদা-কালো রংয়ের সংমিশ্রণে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ রাখার কৌশল বা উপায়ই হলো বারকোড।
বারকোডের ব্যবহার:
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ ধরনের বারকোডিং সিস্টেম প্রচলিত আছে। তবে এর সবগুলোই বিশ্বব্যাপী বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় না। ১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু করা GS1 বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত বারকোড সিস্টেমগুলোর একটি। অ্যামাজন, গুগল, আলিবাবা, ওয়ালমার্টের মত অনলাইন প্লাটফর্ম ছাড়াও বিশ্বব্যাপী লক্ষ-কোটি বিপনী বিতানে পণ্যের তথ্য সংরক্ষণে GS1 স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই বারকোডিং পদ্ধতিতে সাধারণত বারকোডের প্রথম তিনটি সংখ্যা দ্বারা পণ্যটি কোন দেশের কোন কোম্পানির তা জানা যায়। তুলনামূলক বড় প্রতিষ্ঠান অবশ্যই এটি করে থাকে।
বারকোড নির্দেশক:
বারকোড ইস্যুকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা GS1 এর ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রত্যেক দেশের বিপরীতে তারা ৩ সংখ্যার একটি কোড সরবরাহ করে থাকে। এই তিন সংখ্যা দিয়ে সেই দেশের প্রত্যেক কোম্পানির বারকোড শুরু হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের জিএস১ কোড হলো ৮৯০। এর অর্থ হলো, ভারতীয় কোম্পানির উৎপাদিত সকল পণ্যের বারকোড নম্বর ৮৯০ সংখ্যা দ্বারা শুরু হবে।
যে কারণে বারকোড এখন আলোচনায়:
সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনে বর্বর, দখলদার, নিকৃষ্ট ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসরায়েলের নৃশংস হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের জোর দাবি উঠেছে। এই বয়কটের দাবির স্বাপেক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারকোড দেখে ইসরায়েলি পণ্য শনাক্তের একটি পদ্ধতি প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে বলা হচ্ছে, “ইসরাইলী পণ্য চেনার সহজ উপায়। সেক্ষেত্রে বারকোডের শুরুতে যদি ৭২৯ সংখ্যা থাকে, বুঝে নিবেন এটা ইসরাইলী পণ্য” এবং ‘মেড ইন ইসরায়েল’ লেখা দ্বারা ইসরায়েলে উৎপাদিত পণ্য বলা হয়েছে।
এই তালিকার শুরুতে বলা হয়েছে, জিএস১ বারকোডিং সিস্টেমে শুরুর ৩টি ডিজিট পণ্যের কোম্পানির দেশ নির্দেশ করে, তবে পণ্যটি নির্দিষ্ট করে কোন দেশে উৎপাদিত হয়েছে তা নির্দেশ করে না। তাই ৭২৯ সংখ্যা দিয়ে শুরু হওয়া বারকোডের পণ্যটি একটি ইসরায়েলি কোম্পানির পণ্য। তবে এটি ইসরায়েলে বা পৃথিবীর অন্য দেশেও উৎপাদিত হতে পারে।

পরবর্তীতে, জিএস১ এর ওয়েবসাইটে Frequently Asked Questions(FAQ) অংশে “Does the GS1 Prefix (first 2 or 3 digits of the EAN-13 barcode number) show the country of origin?” শিরোনামের একটি ওয়েবপেজ খুঁজে যায়। সেখান বলা হয়, জিএস১ বারকোড পদ্ধতিতে বারকোডের শুরুর তিন সংখ্যা দ্বারা পণ্যটি নির্দিষ্ট করে কোন দেশে উৎপাদিত তা জানা যায় না।
অর্থাৎ, জিএস১ বারকোডিং পদ্ধতিতে ৭২৯ প্রেফিক্স ডিজিট দ্বারা নির্দেশ করা হয় যে, পণ্যটি একটি ইসরায়েলি কোম্পানির পণ্য। তবে ৭২৯ প্রেফিক্স কোডের পণ্যটি ইসরায়েলে যেমন উৎপাদিত হতে পারে, তেমনি ভিন্ন কোনো দেশেও উৎপাদিত হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট করে বারকোডের প্রথম তিনটি সংখ্যা দ্বারা এটি জানা যায় না ঐ পণ্য কোথায় উৎপাদন করা হয়েছে। বরং যে কোম্পানি ঐ পণ্য উৎপাদন করছে সেটি কোন দেশের তা বারকোডের প্রথম তিন সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। তবে যদি বারকোডের প্রথম তিন সংখ্যা ৭২৯ এর পাশাপাশি পণ্যে নির্দিষ্ট করে Made in Israel লেখা থাকে তাহলে তখন নির্দিষ্ট করে বলা যাবে ঐ পণ্যটি ইসরায়েলি কোম্পানির এবং ইসরায়েলে উৎপাদিত।
মূলত বারকোড হলো তথ্য উপস্থাপন করার একটি উপায় বা মাধ্যম- যেখানে পণ্যের প্রস্তুতকারক কোম্পানি, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, ওজন, পরিমাণ, মূল্য এবং স্টক সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নির্দেশিত থাকে। বর্তমানে বিশ্বে GS1 নামক একটি বারকোড ইস্যুকারী সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। GS1 প্রতিটি দেশের জন্য তিন সংখ্যার একটি কোড সরবরাহ করে থাকে। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্যটি কোন দেশের কোম্পানির তা নির্দেশ করে। তবে পণ্যটির উৎপাদন ঐ দেশেও হতে পারে অথবা অন্য কোনো দেশেও হতে পারে।
তথ্য উপাত্ত, প্রমাণ, যুক্তি যেটাই বলি- প্রধান ইস্যু ইসরায়েলের সকল পণ্য বয়কটের আন্দোলনকে শক্তিশালী করা। তাই মুসলিমদের অভিমত, ইসরায়েলের সকল পণ্য বয়কট করে বিকল্প পণ্য বাজারে নিয়ে আসা। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চলছে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের তুমুল আন্দোলন।
অনুসন্ধানী সূত্র: রিউমর স্ক্যানার।
আপনার মতামত লিখুন