নাটোরে সরিষার চাষ করে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের প্রত্যাশা! « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

নাটোরে সরিষার চাষ করে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের প্রত্যাশা!

মোঃ সজীব হাসান স্টাফ রিপোর্টার, নাটোর।
আপডেটঃ ১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৬:০১
মোঃ সজীব হাসান স্টাফ রিপোর্টার, নাটোর।
আপডেটঃ ১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৬:০১
Link Copied!
নাটোরে সরিষার চাষ করে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের প্রত্যাশা! -- বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

ভোজ্য তেল সোয়াবিনের দাম বাড়ায় নাটোরের সকল কৃষক বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন এই সরিষা চাষ করে। কৃষকরা মনে করেন সরিষা চাষ ভালো ফলন হলে আমাদের দৈনিক তেলের চাহিদা পূরণ করতে পারব। নাটোরে সাড়ে ১১ হাজার কৃষকের স্বপ্ন সরিষার হলুদ ফুলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝিকমিক করতে থাকে সবুজ গাছের মধ্যে সরিষার হলুদ ফুলগুলো।

নাটোর শিশির ভেজা শীতের সকাল। চারিদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা চলনবিলের বিস্তৃত ফসলের মাঠ। এরই মধ্যে সোনা ঝরা রোদ পড়লে মনে হয় যেন সাজানো রয়েছে হলুদের বিছানা। যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি।প্রকৃতি কন্যা হলুদ রঙ মেখে বসে আছে সমগ্র মাঠজুড়ে।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝিকমিক করতে থাকে সবুজ গাছের মধ্যে সরিষার হলুদ ফুলগুলো। আর ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছিরা। অন্যদিকে হলুদ ক্ষেতের মধ্য দিয়ে আনন্দ উল্লাসে ছুটে চলে শিশুরা। কোথাও হলুদ আর সবুজের মিশ্রণ, আবার কোথাও পুরোটাই হলুদ। সব মিলিয়ে যেন এক অপরূপ রূপে সেজেছে চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠ।

সম্প্রতি চলনবিলের বন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল বন্যায় রোপা আমনের ক্ষয়ক্ষতি কেড়ে নিয়েছে এই এলাকার অন্তত ২৯ হাজার ৯১৩ জন কৃষকের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণে এবং ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে এবার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অনেকটা আগে ভাগেই কোমর বেঁধে নেমেছেন সরিষা চাষাবাদে। আর এই সরিষা আবাদই বন্যায় কেড়ে নেওয়া কৃষকের সেই স্বপ্ন পূরণসহ গ্রামীণ অর্থনীতিতে দেখা দিচ্ছে সম্ভাবনার হাতছানি। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এই সম্ভাবনার অনেকটাই বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।

বিজ্ঞাপন

কৃষিবিভাগ জানিয়েছে, চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলায় তিন ধাপের বন্যায় রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলায় এবার সাড়ে ১১ হাজার কৃষক সরিষার চাষ করছেন। আসন্ন বোরোর আগেই এই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিগত বছরের তুলনায় কৃষকরা এবার সরিষা চাষাবাদের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। এই কাজে কৃষি বিভাগও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এজন্য সরকারের পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ১০ হাজার কৃষক এবং রবি ও খরিপ -১ এর ২০২০-২১ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় দেড় হাজার কৃষককে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও ২১০ মেট্রিক টন ডিএপি এবং এমওপি সার দিয়েছেন কৃষিবিভাগ। এসবের সঠিক প্রয়োগ বা ব্যবহার হলে সরিষা আবাদ থেকেই কৃষকরা অনেকটাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে অনেকাংশে। জেলায় এবার ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর। মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত মৌসুমে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল ৭ হাজার ৩১৯ হেক্টর। সেখানে অর্জিত হয় ৬ হাজার ৫৪২ হেক্টর। আর মোট শস্য উৎপাদন হয় ৮ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগ আরো জানিয়েছে, এবারের তিন ধাপের বন্যায় জেলার সিংড়া, নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুর উপজেলায় ২৯ হাজার ৯১৩ জন কৃষকের রোপা আমন, সবজি, বোনা আমন ও আউশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬৪ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা। বোরো ধানের আগেই কৃষকরা যদি সরিষা আবাদ ভালোয় ভালোয় করতে পারেন, তাহলে অনেকাংশে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও রাসায়নিক সার দিয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করছে কৃষিবিভাগ।

বিজ্ঞাপন

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় জেলার সাতটি উপজেলায় ১০ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮৩০ জন, নলডাঙ্গায় ১ হাজার ৮৭০ জন, সিংড়ায় ৪ হাজার ৬০০ জন, গুরুদাসপুরে ১ হাজার ৮০০ জন, বড়াইগ্রামে ৩৫০ জন, লালপুরে ৩৬০ জন ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় ১৯০ জন কৃষক এসব সরষে বীজ ও সার পেয়েছেন।সূত্র আরও জানায়, প্রতিটি কৃষককে এক কেজি করে সরিষা বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এক হাজার ৫০০ জন এবং পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ১০ হাজার কৃষককে এসব উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা কৃষি বিভাগের পরামর্শে উন্নত জাতের ও স্বল্পমেয়াদী সরিষা বীজ নিয়ে চাষাবাদে নেমেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং ফসল ভালো হলে তারা অনেকটাই সংকট কাটিয়ে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির বিষয় হচ্ছে আসন্ন বোরো মৌসুমের আগেই এই সরিষা ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। পরবর্তীতে সেখানে বোরোর আবাদ করতে পারবেন।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ সুব্রত কুমার সরকার আমার দেশ প্রতিদিনকে জানান, এবারের বন্যা পরিস্থিতির কারণে কৃষকের রোপা-আমন, বোনা আমন ও সবজি ফসলের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়।

এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের আসন্ন বোরো মৌসুমের আগেই স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে সরিষার চাষ আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই পরামর্শ মোতাবেক কৃষকরা এবার আগাম ও উন্নত জাতের সরিষার চাষাবাদ করেছেন। এজন্য কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ, প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি উপকরণ পেতে সহজলভ্যতা ও সর্বাধিক সহযোগিতার জন্য কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে।

আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় সরিষা আবাদে বাম্পার ফলন হবে। এছাড়া কৃষকরা এবারের বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা অনেকাংশে পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। এজন্য কৃষিবিভাগ সার্বক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মনিটরিং করছেন এবং কৃষকদের পাশে আছেন।

বিষয়ঃ: