খুঁজুন
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬ পৌষ, ১৪৩১

সিআরপিসির ১৭টি ধারায় ক্ষমতা প্রদান

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় কী কী করতে পারবে সেনাবাহিনী ?

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ণ
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় কী কী করতে পারবে সেনাবাহিনী ?

সম্প্রতি ছাত্রজনতার আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারকে। আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ বেশ পোক্ত হাতে কন্ট্রোল করেছে সেনাবাহিনী। এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-২ শাখা থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘১৮৯৮ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হলো।’

এতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭টি ধারায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এসকল ধারা অনুযায়ী সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন করবেন।

যা যা করতে পারবে সেনাবাহিনীঃ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে মঙ্গলবার যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭টি ধারায় সেনা কর্মকর্তারা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারা অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

>>>ফৌজদারি কার্যবিধির এসব ধারা অনুযায়ী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পাওয়ায় এখন থেকে সেনা কর্মকর্তাদের সামনে কোনো অপরাধ হলে অপরাধীদের সরাসরি গ্রেফতার করতে পারবেন, দিতে পারবেন জামিনও।

>>>বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারবেন সেনা কর্মকর্তারা। গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পুলিশকে নির্দেশও দিতে পারবে তারা। বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য তল্লাশি করতে পারবে।

>>>নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দাবিতে রাস্তা আটকে মিছিল সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে সরকারি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের।

>>>প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এখন থেকে সেনা কর্মকর্তারা বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পারবেন। একই সাথে এটি বন্ধে বেসামরিক বাহিনীকেও ব্যবহার করতে পারবে সেনাবাহিনী।

>>>এছাড়াও স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আদেশ জারি করতে পারবে, আটক করতে পারবে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকেও।

এবিষয়ে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. নুরুল হুদা গণমাধ্যমে বলেন, “কমিশন্ড সেনা কর্মকর্তারা যখন চার্জ নিবে, তখন তারা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার এক্সেস করতে পারে।”

“একনজরে সিআরপিসির ধারা সমূহ”
ধারা ৬৪:
এ ধরায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে বলা আছে। এই ধারার ভাষ্য হচ্ছে, যখন ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান, তাঁর সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তখন তিনি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারেন অথবা গ্রেপ্তারের আদেশ দিতে পারেন।

ধারা ৬৫:
এ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অথবা তাঁর উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারের বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। ৬৫ ধারার ভাষ্য, বিচারের জন্য গ্রহণ করার পর তিনি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। অথবা তাঁকে তিনি গ্রেপ্তারের হুকুম দিতে পারেন।

ধারা ৮৩:
এ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমারেখার বাইরে কার্যকর করা দরকার, তখন আদালত পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ না দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলার পুলিশ সুপার বা পুলিশ কমিশনার বরাবর ডাকযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠাতে পারবেন। অর্থাৎ যে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবেন, তিনি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দিতে পারেন। আবার যাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, তিনি যদি ম্যাজিস্ট্রেটের এলাকার বাইরের লোক হন, তখন পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ সুপার বা পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠাবেন।

ধারা ৮৪:
এ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ারের বাইরের এলাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। ৮৪ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, বাইরের এলাকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সংশ্লিষ্ট এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট অথবা উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুমোদন নেবেন। এ অনুমোদন দেওয়া হলে ধরে নেওয়া হবে, যাঁরা অনুমোদন দিয়েছেন, তাঁরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন।

ধারা ৮৬:
এ ধারায় গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেট যে পদ্ধতি অনুসরণ করবেন, সেটি বর্ণনা করা হয়েছে। ৮৬ ধারার ভাষ্য, বাইরের এলাকায় গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে ওই এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর যে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন, সেই আদালতে তাঁকে পাঠাতে হবে। জামিন, মুচলেকা ইত্যাদির বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আইন মোতাবেক আদেশ দিতে পারবেন।

ধারা ৯৫(২):
এ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, কেবল ম্যাজিস্ট্রেটরা ডাক বা টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষকে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে দলিল অর্পণ করতে বলতে পারেন। একই সঙ্গে ডাক ও টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষ দ্বারা ওই সব বস্তুর জন্য তল্লাশি পরিচালনা বা আটক করতে পারেন।

ধারা ১০০:
এ ধারায় অন্যায়ভাবে যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের উদ্ধার করার বিষয়ে বিধান কী, তা বলা আছে। এ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এমন বিশ্বাস করার কারণ ঘটে যে কোনো ব্যক্তিকে এমন পরিস্থিতিতে আটক রাখা হয়েছে, যাতে আটক রাখা অপরাধে পরিণত হয়। তখন ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে উদ্ধারে তল্লাশি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। পরোয়ানা অনুযায়ী তল্লাশির পর যদি আটক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে অবিলম্বে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি প্রয়োজনীয় আদেশ দেবেন।

ধারা ১০৫:
এ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তল্লাশির বিধান বর্ণনা করা আছে। সিআরপিসির ১০৫ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, নিজের উপস্থিতিতে তল্লাশি করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটে আদেশ দিতে পারেন। যে স্থান তল্লাশির জন্য তিনি হুকুম দিতে পারেন, সেই স্থানে তল্লাশির সময় সশরীর উপস্থিত থাকতে পারেন।

ধারা ১০৭:
এ ধারায় শান্তি রক্ষা ও সদাচরণে মুচলেকার বিষয় বলা আছে। সিআরপিসির ১০৭ ধারার ভাষ্য, যখন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয় যে কোনো ব্যক্তি শান্তি ভঙ্গ করতে পারেন বা সর্বসাধারণের প্রশান্তি বিনষ্ট করতে পারেন বা এমন কোনো কাজ করতে পারেন, যাতে শান্তি ভঙ্গ হতে পারে, তখন ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন, তাহলে ওই ব্যক্তিকে শান্তি রক্ষার জন্য এক বছরের অনধিক সময়ের মুচলেকা দেওয়ার জন্য কারণ দর্শাতে বলতে পারেন।

ধারা ১০৯:
এ ধারায় ভবঘুরে ও সন্দেহভাজন ব্যক্তির সদাচরণের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। সিআরপিসির ১০৯ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খবর পান যে কোনো ব্যক্তি তাঁর উপস্থিতি গোপন করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করছেন অথবা যাঁর জীবিকা নির্বাহ করার কোনো প্রকাশ্য পন্থা নেই, তখন ম্যাজিস্ট্রেট ওই ব্যক্তিকে এক বছরের অনধিককালের জন্য মুচলেকা দেওয়ার কারণ দর্শাতে বলতে পারবেন। অর্থাৎ এ ধারা প্রয়োগ হবে, যখন কোনো ব্যক্তি অপরাধ করার জন্য লুকিয়ে থাকার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন অথবা জীবিকা অর্জনের প্রকাশ্য ব্যবস্থা নেই।

ধারা ১১০:
এ ধারায় অভ্যাসগত অপরাধীদের সদাচরণে মুচলেকার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সিআরপিসির ১১০ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো ম্যাজিস্ট্রেট খবর পান, তাঁর এখতিয়ারসীমার মধ্যে অভ্যাসগত দস্যু, গৃহভঙ্গকারী, চোর বা জালিয়াত অথবা চোরাই মাল গ্রহণকারী অথবা চোরদের আশ্রয় দিয়ে থাকেন অথবা চোরাই মাল গোপন বা হস্তান্তর করতে সাহায্য করেন অথবা অভ্যাসগতভাবে অপহরণ, বলপূর্বক সম্পত্তি আদায়ের মতো অপরাধ করেন বা চেষ্টা করেন অথবা সহায়তা দেন অথবা অভ্যাসগতভাবে শান্তিভঙ্গ–সম্পর্কিত অপরাধ করেন বা করার চেষ্টা করেন বা সহায়তা করেন, তখন ওই ব্যক্তিকে তিন বছরের অনধিককালের জন্য মুচলেকা দেওয়ার আদেশ কেন দেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলতে পারবেন। অর্থাৎ যাঁরা অভ্যাসগতভাবে বারবার চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, প্রতারণার কাজে লিপ্ত হন, তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা নেবেন ম্যাজিস্ট্রেট।

ধারা ১২৬:
এ ধারায় জামিনদারদের অব্যাহতির বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। সিআরপিসির ১২৬ ধারার ভাষ্য, কোনো ব্যক্তির শান্তিপূর্ণ আচরণ বা সদাচরণের জন্য কোনো জামিনদার যেকোনো সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সম্পাদিত কোনো মুচলেকা বাতিলের আবেদন করতে পারবেন। এমন আবেদন পাওয়ার পর যে ব্যক্তির জন্য জামিনদার দায়ী, তাঁকে হাজির হওয়ার বা হাজির করার জন্য সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারবেন ম্যাজিস্ট্রেট। অর্থাৎ অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে যিনি জামিনদার হন, তাঁর ওপর কিছু দায়িত্ব বর্তায়। যদি তিনি মনে করেন, তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়, তখন আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন।

ধারা ১২৭:
এ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট অথবা পুলিশের আদেশে জনসমাবেশ ছত্রভঙ্গসংক্রান্ত বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা কোনো থানার ওসি কোনো বেআইনি সমাবেশ অথবা সর্বসাধারণের শান্তি বিনষ্ট হওয়ার কারণ ঘটাতে পারে—এমন পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে কোনো সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হওয়ার আদেশ দিতে পারেন।

ধারা ১২৮:
এ ধারায় জনসমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি প্রয়োগের বিধান বর্ণিত হয়েছে। সিআরপিসির ১২৮ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, আদেশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যদি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ না হয় অথবা ছত্রভঙ্গ না হওয়ার সংকল্প প্রকাশ পায়, তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা থানার ওসি বলপূর্বক সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য অগ্রসর হতে পারবেন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের আটক কিংবা গ্রেপ্তারও করা যাবে।

ধারা ১৩০:
এ ধারার ভাষ্য, যখন কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা পুলিশ কমিশনার সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা কমিশনপ্রাপ্ত নন এমন কর্মকর্তা, যিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সেনাদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁকে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার কাজে এবং গ্রেপ্তার ও আটক করার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রয়োজনবোধে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য অথবা শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার বা আটক করাতে পারবেন। অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগের দ্বারা সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে তিনি সামরিক কর্মকর্তাকে আহ্বান করতে পারেন। সামরিক কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ অনুযায়ী, আদেশ অমান্যকারীদের গ্রেপ্তার ও আটক করতে পারেন। তবে তাঁরা শক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল হবেন।

ধারা ১৩৩:
এ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, যখন কোনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ প্রতিবেদন বা অন্য কোনো সংবাদ পান যে জনসাধারণ আইনসংগতভাবে ব্যবহার করছেন বা করতে পারেন—এমন কোনো পথ, নদী বা খাল থেকে সর্বসাধারণের ব্যবহার্য কোনো স্থান থেকে বেআইনি বিঘ্ন বা উপদ্রব অপসারণ প্রয়োজন অথবা কোনো ব্যবসা বা পেশা পরিচালনায় অথবা কোনো মালপত্র বা পণ্যদ্রব্য রাখা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বা শারীরিক আরাম-আয়েশের পক্ষে ক্ষতিকর, সে জন্য এমন ব্যবসা বা পেশা নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন অথবা এমন মালপত্র বা পণ্যদ্রব্য অপসারণ হওয়া দরকার অথবা কোনো ঘরের নির্মাণকাজে অথবা কোনো ঘরে, তাঁবু বা কাঠামো বা কোনো গাছ এমন অবস্থায় রয়েছে, যা পড়ে যেতে পারে; যাতায়াতকারীদের ক্ষতির কারণ ঘটাতে পারে, যে কারণে ঘর বা তাঁবু অপসারণ বা গাছ অপসারণ বা ঠেকা দেওয়া প্রয়োজন অথবা জনসাধারণের বিপদ থেকে নিবারণের জন্য কোনো পথ বা সর্বসাধারণের ব্যবহার করা স্থানের কাছে পুষ্করিণী, কূপ বা খন্দকের চারদিকে বেড়া প্রয়োজন অথবা কোনো বিপজ্জনক প্রাণী বিনষ্ট, আটক বা অন্য কোনোভাবে বিলি-ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, তখন ম্যাজিস্ট্রেট যে ব্যক্তি বাধা অথবা উপদ্রব সৃষ্টি করছেন অথবা এমন ব্যবসা বা পেশা চালাচ্ছেন অথবা এমন মালপত্র বা পণ্যদ্রব্য রাখিয়েছেন অথবা ঘর, তাঁবু, কূপের মালিক দখলদারদের ওই সব বাধা অপসারণ করার আদেশ দিতে পারবেন।

ধারা ১৪২:
সিআরপিসির ১৪২ ধারার ভাষ্য হচ্ছে, ১৩৩ ধারা অনুসারে আদেশ দেওয়ার সময় ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন, জনসাধারণের প্রতি গুরুতর রকমের আসন্ন বিপদ বা ক্ষতি প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন, তাহলে তিনি মীমাংসা সাপেক্ষে বিপদ মোকাবিলা বা ক্ষতি প্রতিরোধে জন্য যেরূপ প্রয়োজন, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদেশ হয়েছে, তাঁর সেরূপ আদেশ জারি করবেন। এরপরও যদি আদেশ না মানেন, তখন বিপদ মোকাবিলা বা ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট যেরূপ ভালো মনে করেন, নিজে সেরূপ পন্থা অবলম্বন করবেন অথবা অবলম্বন করাবেন। এই ধারা অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা চলবে না।

মূলত সরকার পতনের পর থেকেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা টালমাটাল। বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, কথিত হাইব্রিড নেতাদের চাঁদাবাজি, ক্ষমতার মহড়া, শিল্প কারখানা বিশেষ করে পোশাক কারখানা গুলোতে নানামুখী ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ চোখে পড়ার মতো। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, “দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ইতিবাচক মাত্রায় নিয়ে আসতে হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই এ্যাক্টিভ থাকতে হবে। যেহেতু পুলিশ এখনো তাদেরকে গুছিয়ে নিতে পারেনি। তাই সেনাবাহিনীকে দিয়েই কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।”

রাজধানীর মগবাজারে ট্রেনের ধাক্কাই এক যুবকের মৃত্যু

আব্দুল্লাহ আল মোত্তালিব, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:৫১ অপরাহ্ণ
রাজধানীর মগবাজারে ট্রেনের ধাক্কাই এক যুবকের মৃত্যু

রাজধানীর মগবাজার রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মোঃ আপন (২২)নিহত হয়েছে। নিহত আপন কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী উপজেলার মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে। বর্তমানে মগবাজার এলাকায় ভাড়া থাকতো।

শনিবার(২১ ডিসেম্বর)সন্ধ্যা সোয়া ৫টা নাগাদ অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী সোহাগ বলেন, আজ বিকেলের দিকে মগবাজার রেল ক্রসিং পারাপারের সময় কমলাপুরগামী একটি ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় ওই যুবকটি।পরে দ্রুততাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান ওই যুবকটি আর বেঁচে নেই।

তিনি আরও বলে,
আমরা ওই যুবকের পকেটে থাকা কাগজে লেখা মোবাইল নাম্বারে তার পরিবারের সাথে কথা বলে তার নাম পরিচয় জানতে পেরেছি। পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ ফারুক হোসেন, ওই যুবকের মরদেহ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশকে জানিয়েছি।

আগে একদল সড়কে দুর্নীতি করত এখন করছে অন্যদল: উপদেষ্টা নাহিদ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:৫৩ অপরাহ্ণ
আগে একদল সড়কে দুর্নীতি করত এখন করছে অন্যদল: উপদেষ্টা নাহিদ

সড়ক ও পরিবহন খাতে দুর্নীতির সঙ্গে পলিটিক্যাল প্রভাব জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সড়কের নৈরাজ্যের সাথে একটা পলিটিক্যাল প্রভাব জড়িত। সড়ক ও পরিবহণ খাতে আগে একদল দুর্নীতি করত এখন অন্যদল করছে। এটা খুব সহজে সমাধান হবে না। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। দুর্নীতির সঙ্গে যেহেতু রাজনৈতিক কর্মী ও নেতারা জড়িত তাই সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা রাখতে হবে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সার্কিট হাউস সংলগ্ন প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত সড়ক পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার বিষয়ে জাতীয় সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। দিনব্যাপী এ সংলাপে সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও পরিবহণ সেক্টরের অংশীদারজনও উপস্থিত ছিলেন।

এ-সময় নাহিদ বলেন, বুয়েটের একজন মারা গেল। একটা ধারণা যে সমাজের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যারা আছেন তাদের বিচার হয় না, জবাবদিহিতা হয় না। এখানে সাধারণ মানুষদের জীবনটাই আসলে যায়। এই চিত্র আমাদের সমাজে আছে। এটার পরিবর্তন দরকার। সবাইক বিচারের আওতায় আনা দরকার। এখানে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। উন্নয়ন নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, এখন রাস্তায় বের হয়ে মানুষ মারা গেলে সেটাকে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। কারণ এটা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে হচ্ছে। এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করে রাখা হয়েছে রাস্তায় মানুষ বের হলে মানুষ মারা যেতে পারে৷ এখানে ব্যবস্থাপনাতেই সমস্যা রয়েছে। যে ধরনের প্রতিষ্ঠান সড়কের নিরাপত্তা দিতে পারে সেটাই তৈরি হয়নি।

পরিবহণ সেক্টরের দুর্নীতি চলমান আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের দল দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল আবার এখন আরেক দল রয়েছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা প্রয়োজন। কারণ রাজনৈতিক কর্মীরাই এগুলোত জড়িত।

জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা পরিবহণ সমন্বয়ক কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হকসহ অন্যান্যরা।

অবৈধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে দিল্লির সব স্কুলে নির্দেশনা জারি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:৪৯ অপরাহ্ণ
অবৈধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে দিল্লির সব স্কুলে নির্দেশনা জারি

কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের আঁচ এবার শিক্ষার্থীদের ওপরও লাগছে। অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী শিক্ষার্থীদের শনাক্তে ভারতের রাজধানী দিল্লির সব স্কুলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের পরিচয় যথাযথভাবে শনাক্তও যাচাইয়ের বিষয়টিও আছে নির্দেশনাতে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের (এমসিডি) জারি করা ওই নির্দেশনাটি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি সরকারের প্রধান সচিবের (গৃহ বিভাগ) সভাপতিত্বে গত ১২ ডিসেম্বর এমসিডি একটি ভার্চুয়াল সভা আয়োজন করে। এতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে স্কুলে তাদের শনাক্তকরণ ও তাদের জন্ম সনদ না দেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এছাড়া কোনও অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে জন্ম সনদ না দেওয়ার ব্যাপারে দিল্লির জনস্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমসিডি তাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে এবং সঠিক পরিচয় ও যাচাইকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনারও নির্দেশ দিয়েছে।

এমনকি যেসব জায়গায় এই অভিবাসীরা অন্যের জমি বা জায়গা দখল করে রেখেছে, সেগুলো খালি করে দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন। কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাজ্য তাদের নিজস্ব রেকর্ড রাখে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে অল ইন্ডিয়া সার্ভে ফর হায়ার এডুকেশনের ২০২১-২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থী ভারতে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন।

শিক্ষার্থীদের আগে নয়া দিল্লিতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের ধরতেও পুলিশ অভিযানে নেমেছিল।

বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর কয়েকদিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকেই ঢাকা ও নয়া দিল্লির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না।

এরপর তা আরও নাজুক হয়ে পড়ে গত নভেম্বরে হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর। তার প্রতিবাদে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় এক বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশ মিশনে হামলা হয়। অন্যদিকে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ বাংলাদেশেও চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।