বিলুপ্তপ্রায় মৃৎশিল্প প্রাণ ফিরে পায় পহেলা বৈশাখে

বাংলার নতুন বছর নববর্ষ, পয়লা বৈশাখ। বাংলা এই নববর্ষকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীরা। নারী, পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে ব্যস্ত এখন সব বয়সী মৃৎশিল্পের কারিগররা। বছরের অধিকাংশ সময় তাদের তেমন ব্যস্ততায় না থাকলেও, ফাল্গুন থেকে বৈশাখ এই তিন মাস তাদের কাটে ভীষণ ব্যস্ততায়। তবে উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় মৃৎশিল্পীদের লাভ হচ্ছে না আশানুরূপ।
নববর্ষের উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থানে বসে বর্ষবরণ মেলা। সেই মেলায় চাহিদা থাকে নানা রকমের খেলনা ও মাটির জিনিসপত্রের। তাই এখন শেষ মুহূর্তে দিন-রাত সমানতালে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। হরেক রকমের মাটির তৈরি জিনিস পোড়ানো শেষ করে এখন চলছে রঙের পর্ব। মৃৎশিল্পীদের নেই দম ফেলার ফুরসতটুকু।
যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে, তবুও বংশ পরম্পরায় এবং জীবিকা নির্বাহের তাগিদে অনেকেই এখনো মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্র রপ্তানি হচ্ছে বিদেশও। তবে বিদেশে এসবের চাহিদা থাকলেও মৃৎশিল্পীদের কারিগরি দক্ষতা কম থাকায় ঠিকমতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, সারা বছর তেমন আয় না হলেও বৈশাখি মেলায় মাটির তৈজসপত্র বিক্রি করে বেশ আয় করেন মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি এসব কারুকাজ, কলস, হাঁড়ি, মটকা, বাসন, ডালা, পুতুল এবং তৈজসপত্র গ্রামীণ মেলাতে ছড়ায় মুগ্ধতা। যা ছোট বড় সব বয়সীদেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
মৃৎশিল্পীরা এ বিষয়ে বলেন, প্লাস্টিকের জন্য মাটির খেলনা এখন আর আগের মতো বিক্রি হয় না। কিন্তু পহেলা বৈশাখের গ্রামীণ মেলায় মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র ও ছোটদের খেলনার কদর বেশি থাকে। বেচাকেনা ভালো হয়। চৈত্র মাসের পুরো সময় আমরা ব্যস্ত থাকি। তবে উপকরণের দাম বাড়ায় আমাদের লাভ কম হচ্ছে।
ফনিন্দ্র পাল নামের এক মৃৎশিল্পী বলেন, মাটির তৈরি জিনিসপত্রের বেচা- কেনা আগে খুব ভালো হতো। অ্যালুমিনিয়ামের জিনিস আসায় এখন আর আগের মতো এসব বেচা-কেনা হয় না। লোকজন মাটির জিনিস নিতে চায় না। আবার মাটির জিনিসের সব উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আমাদের লাভও খুব কমই হয়। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনো সহযোগিতা পায় নি।
বিসিক টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম এ বিষয়ে বলেন, মৃৎশিল্প বাংলাদেশের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শিল্প। বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এক সময় ১২৩৫ জন মৃৎশিল্পী ছিলেন। কালের বিবর্তনে বর্তমানে খুব কমই মৃৎশিল্পী রয়েছেন। মৃৎশিল্পীরা যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চান, তাহলে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন