খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ, ১৪৩১

রক্ষক যখন ভক্ষক হয়

ভাঙ্গায় এখনও ছাত্রীদের ক্লাস নেন “লম্পট” আজাদ! (পর্ব-১)

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ
ভাঙ্গায় এখনও ছাত্রীদের ক্লাস নেন “লম্পট” আজাদ! (পর্ব-১)

*২০ লক্ষ টাকায় যৌন হয়রানি করে আত্মহত্যায় বাধ্য করা ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেন আজাদ। 

*জড়িত ছিলো স্কুল কমিটি,প্রধান শিক্ষকসহ রাঘব বোয়ালরা। 

*প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি চেষ্টার অভিযোগ আজাদের বিরুদ্ধে।  

২০১৭ সালে ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার ভাঙা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী স্কুলছাত্রী হিরামনি মৃত্যুতে দায়ী লম্পট শিক্ষক আজাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও এর পেছনের কারণ নিয়ে “ভাঙ্গায় লম্পট শিক্ষক আজাদের ফাঁসি চায় শিক্ষার্থীরা” শিরোনামে একটি চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে অগ্রযাত্রা।

অগ্রযাত্রায় প্রকাশিত ১ম পর্বের সেই ভিডিও প্রতিবেদনটি ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে ভাঙা উপজেলায়। এরই জের ধরে অগ্রযাত্রা’র সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীদের নানান রকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে লম্পট শিক্ষক আজাদ। ওদিকে এরই মধ্যে চলমান অগ্রযাত্রা’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে স্কুলছাত্রী হিরামনি মৃত্যুতে আজাদের জড়িত থাকার আরো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

এবারের অনুসন্ধানে অগ্রযাত্রা কথা বলে ২০১৭ সালে ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজাদের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে সেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নেয়া একই স্কুলের ১০ম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী হিরামনি তিশার বাবা মনির হোসেনের সাথে৷ তার সাথে কথা বলে ও  সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে- চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী হিরামনি তিশার মৃত্যুতে দায়ী যৌন হয়রানিকারী লম্পট আজাদ, স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের সহযোগিতায় স্কুলছাত্রী হিরামনি তিশার মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে। মূলত, হিরামনি তিশার গৃহশিক্ষক ছিলেন দুশ্চরিত্র আজাদ, আর পড়াতে গিয়ে নানানভাবে প্রায়শই যৌন হয়রানি করতেন হিরামনি তিশাকে। পিতৃতূল্য শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরণের বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়ে হিরামনি তিশা লজ্জায় ঘৃণায় সেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় তখন ভুক্তভোগী হিরামনির মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন লম্পট শিক্ষক আজাদের বিরুদ্ধে।  কিন্ত মামলা দায়ের পর থেকে তৎকালীন স্থানীয় চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা, ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কতিপয় অসাধু সদস্য, ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় অনেকটা চাপ প্রয়োগ করে ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে হিরামনি তিশার মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। এমনকি সেসময় লম্পট আজাদের লালসার শিকার হয়ে প্রাণ দেয়া মেধাবী শিক্ষার্থী হিরামনি তিশার সহকর্মীরা বেশ কয়েকদিন আন্দোলন করলেও তাদেরকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেন লম্পট আজাদ ও তার লোকজন, এমনকি তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়ার হুমকিও দেয় ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কতিপয় সদস্য ও শিক্ষকরা।

ওদিকে হিরামনি তিশাকে যৌন হয়রানি করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার ঘটনা জানাজানি হলে লম্পট আজাদের তৎকালীন স্ত্রীও ঘৃণায় তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। অথচ একজন সম্ভাবনাময় মেধাবী ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া লম্পট শিক্ষক আজাদ ২০ লক্ষ টাকায় এতোবড় চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধামা চাপা দিয়ে পুনরায় ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছেন অদ্যবধি। কিন্ত লম্পট আজাদকে স্কুল কমিটি ও কতিপয় শিক্ষকের নগ্ন সমর্থন ও আজাদের ব্যাপক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে কোন প্রতিবাদ জানাতে পারেনি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, একজন সাধারণ শিক্ষক পদে চাকরি করা আজাদ ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে হিরামনি তিশার মৃত্যু রহস্য কিভাবে ধামাচাপা দিলেন, এতো টাকা তিনি কোথায় পেলেন? তা নিয়েও রয়ে গেছে প্রশ্ন-

গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ২০১৭ সালে লম্পট শিক্ষক আজাদ কর্তৃক ধামাচাপা দেয়া হিরামনি তিশার মৃত্যুর ঘটনা ফের প্রকাশ্যে এনে আজাদের পদত্যাগ ও ফাঁসি দাবি করে। এমনকি এ নিয়ে লিখিত বিবৃতি ও কর্মসূচীও দেয়া হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে। কিন্ত পুনরায় পুরোনো রুপে ফিরে আসে আজাদ, সে শিক্ষার্থীদের আবারো নানাবিধ হুমকি দিতে থাকে, এমনকি তার হুমকি থেকে বাদ যায়নি গণমাধ্যমও।

অগ্রযাত্রা তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় কিছু অসাধু সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা দিয়ে অগ্রযাত্রার সংবাদকর্মীদের হুমকি দিয়ে গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধের চেষ্টাও করেন লম্পট আজাদ। লম্পট শিক্ষক আজাদকে শিক্ষার্থীরা ডাকছেন খুনি আজাদ বলে। এমন একজন লম্পট যৌনহয়রানিকারী ও ছাত্রীর মৃত্যুতে দায়ী চরম বিতর্কিত শিক্ষককে দিয়ে কেনো ও কিভাবে স্বনামধন্য ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কতৃপক্ষ ছাত্রীদের ক্লাস নেয়ান তা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে তুমুল সমালোচনা। 

২০১৭ সালে লম্পট আজাদ কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়ে সেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নেয়া হিরামনির পরিবারের পক্ষ থেকে হওয়া মামলা ধামাচাপা দেয়ার ঘটনায় লম্পট আজাদকে সহযোগিতা করা ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষক এবং স্থানীয় কথিত গণমান্যদের মধ্যে কে কে কিভাবে এবং কোন স্বার্থে জড়িত তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকবে লম্পট আজাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ২য় পর্বে—

মারা গেছেন ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:০৩ অপরাহ্ণ
মারা গেছেন ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

দেশের আলোচিত সমালোচিত নারী উদ্যোক্তা, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার রোবাইয়াত ফাতিমা তনির স্বামী শাহাদাৎ হোসাইন মারা গেছেন। তিনি ব্যংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে খবরটি নিশ্চিত করেছেন তনি নিজেই।

আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) নিজের ফেসবুকে তনি লিখেছেন, ‘সে আর নাই। ব্যাংকক সময় রাত ৩.০৩ মিনিটে আমাকে সারাজীবনের মতো একা করে চলে গেছে।’

মাস কয়েক আগে গুরুতর অসুস্থ হন তনির স্বামী। অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ব্যাংকক নেওয়া হয় তাকে। সে খবর নিজের ফেসবুকে জানিয়ে তনি লিখেছিলেন, ‘জীবনের সব থেকে কঠিন সময় পার করছি, আমি কোনোভাবেই তাকে হারাতে চাই না।

সব কিছু অনিশ্চিত জেনেও আল্লাহর বিশেষ কোনো রহমতের আশায় অনেক কষ্ট করে আজকে সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে আনিয়ে তারপর ব্যাংকক নিয়ে আসছি, আমার জীবনের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছি, বাকি আল্লাহর ইচ্ছা।’

সবার কাছে দোয়া চেয়ে তনি শেষে লিখেছিলেন, সবাই দোয়া করবেন আমার ছেলের জন্য হলেও আল্লাহ যেন তাকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। চিরতরে চলে গেলেন এ সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারের স্বামী।

বিএনপি নেতার বক্তব্যে তোলপাড়

‘সিদ্ধান্ত হয়েছে বিআরটিসি কাউন্টার বিএনপি ভোগ করবে’

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫৩ অপরাহ্ণ
‘সিদ্ধান্ত হয়েছে বিআরটিসি কাউন্টার বিএনপি ভোগ করবে’

সম্প্রতি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে বাস কাউন্টার দখলে নেওয়ার কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন মিল্লা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হইছে, এখানে বিআরটিসির কুয়াকাটা এবং তুলাতলির কাউন্টার ৯ ওয়ার্ডের বিএনপির কমিটি মিল্লা ভোগ করবে।’ আর এই ভিডিও নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে রীতিমতো তোলপাড় চলছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মোস্তফা শেখ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান।

বিআরটিসির কুয়াকাটা ও তুলাতলির কাউন্টার স্থানীয় বিএনপি দখলে নেওয়ার কথা জানিয়ে ভিডিওতে মোবাইল ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে তিনি বলেন, ‘এখন সভাপতি, সিনিয়রসহ আমাদের সবার সিদ্ধান্ত এক, কালকে হইতে আপনাদের কাউন্টার বন্ধ থাকবে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) কুয়াকাটা কাউন্টারের ইনচার্জ আলী আহমদ শেখের ছেলে মোস্তফা শেখ বলেন, ‘আমার বাবার নামে বিআরটিসির দুটি কাউন্টার রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর তারা (বিএনপির নেতা-কর্মীরা) তুলাতলি কাউন্টার নিয়ে গেছে। এখন কুয়াকাটা কাউন্টার দখলে নেওয়ার জন্য ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পৌর বিএনপির সেক্রেটারি আমাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলেছে। তবে আমরা তাঁর কথায় রাজি হইনি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা পর্যটন নগরীতে বিআরটিসির দুটি কাউন্টার রয়েছে। এর মধ্যে তুলাতলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি এবং কুয়াকাটা শহরে অন্যটি। ২০১৯ সালে বরিশাল বিআরটিসির ডিপো থেকে কাউন্টার ইনচার্জ হিসেবে কুয়াকাটা এলাকার আলী আহমেদ শেখসহ আরও দুজনকে কাগজে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১৯ সাল থেকে কাউন্টার দুটি আলী আহমেদ শেখ পরিচালনা করে আসছেন। গত ৫ আগস্টের পর তুলাতলি কাউন্টারটি কুয়াকাটা পৌর বিএনপির নেতা-কর্মীরা দখল করে নেন। পরবর্তী সময়ে কুয়াকাটা শহরের কাউন্টার দখলে নিতে ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কাউন্টারের সামনে বসে মোস্তফা শেখকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে কাউন্টার বন্ধ করে রাখার কথা বলেন। এই কথোপকথনের ভিডিও গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে চলছে স্থানীয়দের মধ্যে চলছে তুমুল সমালোচনা।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘ভোগদখলের কোনো বিষয় নয়। যাত্রীর টিকিট কাটা নিয়ে ঝামেলা হয়, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কাউন্টার বন্ধ রাখতে বলেছি।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংস সরকার কুট্টি বলেন, ‘আমি কথোপকথনের বিষয়ে জানি না।’

টিউলিপকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার দাবি দুর্নীতিবিরোধী জোটের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:৪১ অপরাহ্ণ
টিউলিপকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার দাবি দুর্নীতিবিরোধী জোটের

দুর্নীতির অভিযোগের মুখে ক্রমেই চাপ বাড়ছে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর। এরই অংশ হিসেবে এবার টিউলিপকে দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী জোট। এই জোটের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা হিসেবে সমাদৃত অক্সফাম ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালও রয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, টিউলিপ সিদ্দিককে তার মন্ত্রিত্বের ভূমিকার দুর্নীতিবিরোধী দিক থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি জোট।

মূলত টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া।

কিন্তু বাংলাদেশে এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

এমন অবস্থায় টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে সপ্তাহান্তে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। যদিও হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের ৪২ বছর বয়সী এমপি টিউলিপ দাবি করেছেন, তিনি কোনও ভুল করেননি।

এছাড়া সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, স্যার কেয়ার স্টারমার তার মন্ত্রীর প্রতি “পূর্ণ আস্থা” ধরে রেখেছেন। যদিও টিউলিপকে বরখাস্ত করতে নতুন করে চাপের মুখোমুখি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ওপর এই চাপ তৈরি হয়েছে।

এমন অবস্থার মধ্যেই টিউলিপকে এবার তার দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে সরে যেতে দাবি জানিয়েছে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী জোট ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন। এই জোটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফামের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোও আছে।

ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ সরকারে যে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো স্পষ্টতই গুরুতর ‘স্বার্থের সংঘাত’। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার খালা ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে।

মূলত আর্থিক দুর্নীতির এক মামলায় বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার খালা শেখ হাসিনা-সহ পরিবারের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের এই মন্ত্রী ব্যাপক চাপে আছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে (৫ আগস্ট) ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারির পর প্রথম প্রকাশ্যে টিউলিপ:
যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর এই জোট বলেছে, “যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং খ্যাতি রক্ষায় সরকারের পক্ষে বেশ কিছু জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ টিউলিপ সিদ্দিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারণে সৃষ্ট স্বার্থ-সংঘাতে এটি এখন স্পষ্ট নয় যে তিনি এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থানে আছেন কিনা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “ট্রেজারি মন্ত্রী যুক্তরাজ্যের মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবিলার কাঠামোর দায়িত্বে রয়েছেন, অথচ তার এমন একটি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাথে সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে যা সেই কাঠামোর অধীনে তদন্ত করা যেতে পারে।”

এর আগে ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে বলেন, “তিনি নিজেকে স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে সমর্পণ করে সম্পূর্ণভাবে সঠিক কাজ করেছেন। সেই প্রক্রিয়া চলমান আছে।”

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে টিউলিপ ও তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত চলছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দুর্নীতির এই অভিযোগের তদন্তে যুক্ত হয় টিউলিপ সিদ্দিকের নাম। এরপর তদন্তের অংশ হিসাবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা দেশের বড় ব্যাংকগুলোকে সিদ্দিকের সাথে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিবরণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে রয়েছেন। টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সদস্য, এমপি এবং প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে লন্ডনের কিং’স ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যাকক্ষের একটি ফ্ল্যাট ২০০৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিককে আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার উপহার দিয়েছিলেন বলে জানানো হয়। মোতালিফ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ। বেশ সস্তাতেই পেয়েছিলেন তিনি, কারণ একই বছর আগস্ট মাসে সেই ফ্ল্যাটটির পার্শ্ববর্তী আরেকটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)।

যুক্তরাজ্যের ইলেক্টোরাল রোল ডেটার তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়ার পর কিং’স ক্রসের সেই ফ্ল্যাটটিতে কয়েক বছর ছিলেন টিউলিপ। এরপর তার অন্য ভাই-বোনরা ছিলেন আরও বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন টিউলিপ। সেখান থেকে বাৎসরিক ৯০ হাজার পাউন্ড (১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা) উপার্জন হচ্ছে তার।