টাকার বস্তা নিয়ে চলাফেরায় সন্দেহ
৩ কোটি টাকা উদ্ধার: সাবেক সচিব শাহ কামাল গ্রেপ্তার
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. শাহ কামালের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে তার বাসা থেকে এসব দেশি ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ডিএমপির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাবর রোডের এফ ব্লকের ২৯/২ ও ৩ নম্বর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বাংলাদেশি টাকা ও বিদেশি মুদ্রা। অভিযানে নগদ ৩ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ১৬৬ টাকা, ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা মূল্যের ১০০ টাকার প্রাইজবন্ড এবং ১০ লাখ ৩ হাজার ৩০৬ টাকা মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশি মুদ্রার মধ্যে রয়েছে-৩ হাজার মার্কিন ডলার, ১ হাজার ৩২০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ২ হাজার ৯৬৯ সৌদি রিয়াল, ৪ হাজার ১২২ সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, ১ হাজার ৯১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ৩৫ হাজার কোরিয়ান ইউয়ান ও ১৯৯ চীনা ইউয়ান মুদ্রা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদপুরের দুটি বাসার মধ্যে একটি ৬ তলা। বাসার দ্বিতীয়তলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল থাকেন পরিবার নিয়ে। পরে স্থানীয়রা জানতে পারেন, বাসাটিতে বিপুল পরিমাণ টাকা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর স্থানীয় জনতা ওই ভবনটি ঘিরে ফেলে। খবর দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। পরে পুলিশের একাধিক টিম ওই বাড়িতে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে। ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান জানান, দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হলেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পৃথক মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ড. শাহ কামাল সর্বশেষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ২০২০ সালের ১৮ জুন তাকে অবসরে পাঠায় সরকার। শাহ কামাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বদলি, কেনাকাটা, উন্নয়ন কাজসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণের অভিযোগ ছিল। শাহ কামাল গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ স্কাউটসের ৫২তম বার্ষিক কাউন্সিল সভায় প্রধান জাতীয় কমিশনার নির্বাচিত হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাসা দুটি এক সপ্তাহ ধরে তালাবদ্ধ ছিল। তবে প্রতি রাতেই গাড়িতে করে টাকার বস্তা নিয়ে যাওয়া হতো। সন্দেহ বাড়তে থাকলে এই অবস্থায় স্থানীয় জনতা শুক্রবার বাড়ি দুটি ঘেরাও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়।
এদিকে আরেকটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সাদা পোশাকে ২০-২৫ জন লোক একটা গাড়ি নিয়ে ওই বাড়িতে আসে। স্থানীয় লোকজন থাকলেও তারা বাসায় কাউকে ঢুকতে দেয়নি। তারা নিজেদের দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। মোস্তফা গাজী দুদু গণমাধ্যমে বলেন, তাদের গতিবিধি সন্দেহ হলে আমরা এলাকার ‘বড় ভাইদের’ খবর দিই। এক পর্যায়ে এক ব্যক্তি একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দেন। স্থানীয় জনতার জেরার মুখে এক পর্যায়ে তারা ৫টি টাকার বস্তা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ নিয়ে গেছেন।
আরেক বাসিন্দা মনোয়ার হাসান জীবন বলেন, গত ৪-৫ দিন ধরে আমরা খেয়াল করছিলাম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কয়েকজন এসে একটি গাড়িতে করে বস্তা নিয়ে যেত। শুক্রবার একটি গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এসে দেখি সাদা পোশাকে ২০-২৫ জনের একটি টিম বাসার ভেতর টাকা বস্তা ভরছে। কয়েকজন স্বর্ণের বক্সগুলো ভেঙে গহনাগুলো পকেটে নিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের এসে জিজ্ঞেস করলে তারা প্রথমে জানায়, তারা দুদক থেকে এসেছে। ভেতরে থাকা অন্যরা নিজেদের একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয় দেয়। এক পর্যায়ে তারা টাকার বস্তা নিয়ে পালিয়ে যায়।





আপনার মতামত লিখুন