ভুয়া সভাপতি রুনুর নেতৃত্বে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট
কথিত ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে মারধর, লুটপাট, ৪০ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ
রাজধানী সহ সারাদেশের বিভিন্ন যায়গায় ভুয়া ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রায়শই ঘটছে চাঁদাবাজি, লুটপাট, ফিটিংবাজি সহ নানা অপকর্ম। এবার রাজধানীর মিরপুর ১ এ “ঢাকাস্থ মিরপুর থানা কেন্দ্রীয় মহিলা সমবায় সমিতি লি:” এর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
মিরপুর ১ এর প্রাণকেন্দ্র প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত ওই ভবনটিতে অনেকগুলো ব্যবসায়ীক দোকান ছিলো। বিশেষ করে সেখানে সিমেন্ট, লেদার, জুতার ব্যবসা ছিলো রমরমা। ঠিক এ কারণেই শকুনের কুদৃষ্টি আষ্টেপৃষ্টে রেখেছিলো বহুদিন ধরে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, “সেখানকার সমিতির কমিটি গত ১৭ বছর যাবত আওয়ামিলীগের সহায়তায় নানাবিধ প্রভাব খাটিয়ে আটকে রেখেছিলো কমিটির ভুয়া সভাপতি ফেরদৌস আরা রুনু। এখানে মাত্র ২টা দোকান থাকার সুযোগে ওই ভবন ও মার্কেট দখল করতে মরিয়া ছিলো রুনু। তাই ছাত্র জনতার আন্দোলনে ছাত্র সমন্বয়কদের ভূমিকা দেখে ছাত্রদের নিয়ে নতুন কূট-কৌশল আটে রুনু। তবে এই সমিতিটি সমবায় অধিদপ্তরের আওয়তায় নিবন্ধিত হলেও, অধিদপ্তর চুপ থাকায় ঝামেলা মিটছে না।”
তারা বলছেন, রুনুকে সমিতির কেউই পছন্দ করে না। কিন্তু সে গায়ের জোর খাটিয়ে পদে বসতে চায়। তারই ফলস্বরূপ রুনু গতকাল শনিবার ও আজ রবিবার ভুয়া ছাত্র ও কথিত সমন্বয়ক ভাড়া করে এনে দোকানপাটে হামলা চালায়, করে লুটপাট। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর গাড়ি আসলে ঘটনাস্থল থেকে লুটপাটকারীদের অনেকেই সটকে পড়ে। কিন্তু ভাড়াকৃত দুষ্কৃতিকারীরা যাওয়ার আগে প্রতিটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ ভেঙে টাকা ও দামী জিনিসপত্র নিয়ে ভেগে যায়।
ভবনটিতে সিমেন্টের দোকান সহ ৮টি দোকান ছিলো আসমা রহমানের। তিনি গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন, “আমার এখানে সবচেয়ে বড় ব্যবসা ছিলো। সিমেন্টের দোকানে আমার প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ছিলো। অন্যান্য দোকানেও টাকা ছিলো। রুনু সহ তার লোকজন এসে কোনোরকম সুযোগ না দিয়েই দোকান ভাঙা শুরু করে। আরেক গ্রুপ প্রতিটি দোকানের ক্যাশবক্স থেকে টাকা, মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা শুরু করে। একপক্ষ মার্কেটের সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে আমাদের ধরে রাখে। আমরা কিছু বলতে গেলেই তারা আমাদের গায়ে হাত তোলে। কোনো ছাত্রদের ব্যবহার কখনো এমন হতে পারে না। আমরা খোঁজ পেয়েছি রুনু ধানমন্ডি ও পুরান ঢাকা থেকে তাদেরকে ভাড়া করে এনেছে।”
ভুক্তভোগী আসমা আরো বলেন, “শুধু আমার দোকান গুলোই না, ওরা সবগুলো দোকানে ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। বাইরে থেকে মার্কেট ভাঙার মেশিন এনে হঠাৎ করে এমন ভাঙচুর শুরু করে। রুনু ১৭ বছর ধরে সমিতির নির্বাচন করতে দেয়না। এমনকি এই ব্যবসা ও সমিতি নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। তারপরও রুনুর এমন সাহস হয় কিভাবে ? আমরা সঠিক তদন্ত করে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চায়। কারণ আমাদের সমিতি সমবায় অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত হলেও তারা কোনো সহযোগিতা করছে না।”
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, “এখানে কয়েকটা ছেলেমেয়ে বেশ ভালোই লুট করেছে। বিশেষ করে একটা জুতার দোকান সম্পূর্ণ কাচের গ্লাসে অনেক ভালো ডেকোরেশন ছিলো। সেখানে সবাই অনেক জুতাও লুট করেছে। তাদের কয়েকজন কিছু টাকা হাতে টানাটানিও করছিলো। আমরা দেখে হতবাক। তাদের কর্মকান্ড দেখে কোনোভাবেই ছাত্র মনে হলো না।”
ভুক্তভোগী আরেক ব্যবসায়ী জানান, “আমাদেরকে কোনো নোটিশ না দিয়েই রুনু ও তার ভড়াটে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। আমি দোকানে বসে থাকা সত্ত্বেও তারা মেশিন দিয়ে ভাঙা শুরু করে। আমি নিষেধ করাই আমার কলার ধরে মারা শুরু করে। এটা কি কোনো ছাত্রদের কাজ হতে পারে ভাই ? আমরা ছাত্রদের সম্মান করি। কিন্তু এই ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আমরা আমাদের ক্ষতিপূরন সহ সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”
এ ঘটনায় তিব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ। তারা এমন লুটতরাজের প্রতিবাদ জানিয়ে আগামীকাল মিরপুর থানা অভিমুখে প্রতিবাদী মানববন্ধন করবে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফেরদৌস আরা রুনুর মন্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি আমরা। তবে কেউ তার সঠিক ঠিকানা দিতে পারেনি।
আপনার মতামত লিখুন